মেঘালয় ভ্রমণ কাহিনী - সাইফ ব্লগ

Latest

Sunday, April 23, 2023

মেঘালয় ভ্রমণ কাহিনী

গত দুই অক্টোবর ২০২২ খ্রিস্টাব্দ ঘুরে এলাম মেঘের রাজ্য মেঘালয় ।  এই ট্যুরে আমরা মোট চারজন ছিলাম । আমি, রেজাউল ভাই, মহি উদ্দিন মিঝি  ও সোহেল ভাই। আমরা ০১ তারিখ রাত্রে ফেনী রেলওয়ে স্টেশন হতে সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রা শুরু করি । পরদিন সকাল ৭ টার সময় আমরা সিলেট রেলওয়ে স্টেশন পৌছাই । এরপর ফ্রেশ হয়ে আমরা সকালের নাস্তা সেরে নিই স্টেশনের পাশের একটা রেস্টুরেন্টে । এরপর আমরা একটা সি এন জি নিয়ে সরাসরি তামাবিল স্থলবন্দরে যাই। সোনালী ব্যাংকে গিয়ে ট্রাভেল ট্যাক্স জমা দিই ।  এরপর ইমিগ্রেশনে চলে যাই । ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এর কাজ সেরে আমরা ইন্ডিয়া প্রবেশ করি । 

এরপর ইন্ডিয়া গিয়ে ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে আমরা পায়ে হেটে ডাউকি বাজার চলে আসি। ডাউকি বাজারে বাংলা টাকাকে রুপিতে কনভার্ট করে নিই। দুপুরের খাবার সেরে একটা চারজনের গাড়ি নিয়ে চেরাপুঞ্জির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি ।

উমক্রেম ফলস 

যাওয়ার পথে উমক্রেম ফলস , বরহিল ফলস, এশিয়ার পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিনং ভিলেজ  এবং লিভিং রুট ব্রীজ পরিদর্শন করি। 

লিভিং রুট ব্রীজ

 
বড়হিল ফলস

এরপর চেরাপুঞ্জির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই । রাত ১০.৩০ এর সময় চেরাপুঞ্জি গিয়ে পৌছাই । চেরাপুঞ্জি গিয়ে বিপদে পড়তে হয় । দূর্গা পূজার বন্ধের কারনে হোটেল , রিসোর্ট সব লোকে ভরপুর হয়ে যায় । কোথায় কোনো হোটেল খুজে পাচ্ছিনা । হোটেল খুজতে খুজতে রাত বারোটা বেজে গেছে। এরপর একটা হোটেলের ম্যানেজারকে ফোন দেয় গাড়ির ড্রাইভার ওখানেও কোনো সিট খালি নাই। ম্যানেজার বলল ওদের ডাইনিং রুমের ফ্লোরে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারবে । আমরা রাজি হয়ে যাই। রাতের খাবার সেরে পাহাড়ে ঘুরে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। 

 

সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা ফ্রেশ হয়ে আবার ঘুরার জন্য বেরিয়ে পড়ি । চেরাপুঞ্জিতে আমাদের প্রথম স্পট ছিল ওয়াহকাবা ফলস  অনেকে উঁচু পাহাড়ের উপরে ঝর্ণাটি দেখতে ভালই লাগছিল। 

 

ওয়াহকাবা ফলস

এরপর আমরা পরিদর্শন করি বিখ্যাত সেভেন সিস্টারস ফলস ।  সেভেন সিস্টারস ফলসের সৌন্দর্য্য এক কথায় অসাধারণ । হঠাত মেঘে সব ঢেকে যায় চারদিক । হঠাত বৃষ্টি শুরু হয় । আবার রোদের আলোতে চারদিক চকচক করতে থাকে । রোদের আলো বেশিক্ষণ দেখা যায় না । আল্লাহয় অপরূপ সৃষ্টি । 

সেভেন সিস্টারস ফলস

 

এরপর আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল কিনরেম ফলস। এক একটা ফলসের এক এক রকম সৌন্দর্যে আমরা বিমোহিত হয়ে যাই । আমাদের সকল ক্লান্তির ছাপ চলে যায়। 

কিনরেম ফলস

 

এরপর আমরা গমন করি মাওসমাই ক্যাভে অনেক সুন্দর একটি ক্যাভ ছিল এটি গুহার ভেতরে পাহাড়ের গায়ের প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ঠ কারুকাজগুলো ছিল অসাধারণ । 

মাওসুমাই ক্যাভ

 

মাওসমাই ক্যাভের পাশেই একটা রেষ্টুরেন্টে দুপুরের খাবার সেরে নিই। 

এরপর যাত্রা করি নোহকাইলিকাই ফলসের উদ্দেশ্যে ।  নোহকাইলিকাই ফলস খুবই সুন্দর ছিল।

নোহকাইলিকাই ফলস

 

এরপর আমরা ডেইনথলেন ফলসে গমন করি। 

ডেইনথলেইন ফলস

 

ডেইনথলেন ফলস পরিদর্শন শেষে আমরা ওয়েই-স-ডং ফলসে যাই  । ওখানে সন্ধ্যা হয়ে যায় ।

ওয়েই-স-ডং ফলস

ওয়েই-স-ডং ফলসের পাশেই আমরা বিকালের নাস্তা সেরে নিই। 

এরপর আমরা মেঘালয়ের রাজধানী শিলং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করি । যাওয়ার পথে আমরা ফ্রুট ফলসে যাই কিন্ত্র অন্ধকার হয়ে যাওয়াতে তেমন উপভোগ করতে পারি নাই। 

 রাত ১১ টার সময় আমরা শিলং পুলিশ বাজার এসে পোছাই। এসে বিপদে পড়তে হয় কোনো হোটেল খালি নেই। সব বুকিং অনেক খুজে একটা হোটেলের ডাইনিং রুম খালি পাই । হোটেলের নাম  ছিল আসুতোষ হোটেল যা পুলিশ বাজারের কাছেই ছিল । 

শিলং পুলিশ বাজার

হোটেলে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ি । সেদিন ছিল দূর্গাপূজার শেষ দিন অর্থাৎ দশমী । তাই শিলং পুলিশ বাজার খুব জমজমাট ছিল। এমনিতে শিলং শহর রাত আটটার মধ্যে সব দোকান মার্কেট বন্ধ হয়ে যায় । 

খাওয়া দাওয়া শেষে হোটেলে ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়ি । 

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে লাইটলুম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন এবং এলিফ্যান্ট ফলস দেখার জন্য বেরিয়ে পড়ি। 

এলিফ্যান্ট ফলস

প্রথমে এলিফ্যান্ট ফলস যাই, সেখানে ঘুরে একটা হোটেলে সকালের নাস্তা করি এরপর লাইটলুমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি । প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট পর লাইটলুম পৌছাই । লাইটলুমে গিয়ে সৌন্দর্য দেখে মাথা নষ্ট হওয়ার উপক্রম ছিল। এত সুন্দর জায়গাটা যা বর্ণনা করা সম্ভব না। 

লাইটলুম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন

লাইটলুম ঘুরে ওখানকার স্ট্রীট ফুড খেয়ে আমরা আবার শিলং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। কারণ আমাদের টার্গেট ছিল বিকালের মধ্যে শপিং সেরে নিব। শিলং পৌছে একটা মুসলিম হোটেলে দুপুরের খাবার সেরে নিই । এরপর আবার হোটেলে ফিরে আসি । একটু রেস্ট নিয়ে ব্যাগ রেখে পুলিশ বাজার চলে আসি । পুলিশ বাজার অনেক জমজমাট ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ মার্কেট বন্ধ ছিল পূজা উপলক্ষে তাই তেমন একটা কেনাকাটা করতে পারি নাই। 

পুলিশ বাজারে স্ট্রিট ফুড পাওয়া যায় । আমরাও কয়েকটি ট্রাই করেছিলাম । রাত আটটা পর্যন্ত পুলিশ বাজারে ঘুরে আবার হোটেলে ফিরে আসি কারন খুব সকালে আবার ডাউকির উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে। 

পরদিন সকালে ডাউকি আসার জন্য পুলিশ বাজার থেকে একটা গাড়ি রিজার্ভ করি । পথে ক্রাংসুরি ফলস ও স্নোনেংপেডেং ভিলেজ ঘুরব ।

ক্রাংসুরি ফলস

ক্রাংসুরি ফলসে গিয়ে আমরা গোসল করি । অন্য রকম অনুভূতি ছিল । এত সুন্দর পানি । ঝকঝকে পরিস্কার পানি ছিল । এরপর আমরা স্নোনেংপেডেং ভিলেজে চলে আসি। 

স্নোনেংপেডেং ভিলেজ

সবগুলো স্পটই ছিল অসাধারণ । এরপর ডাউকি বাজার এসে চকোলেট ও আরো কিছু কেনাকাটা সেরে বিকাল ৫ টার মধ্যে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এর কাজ শেষে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। 

ড্রাইভারের সাথে আমরা চার কুতুব

একটা মাইক্রোতে সিলেট জিন্দাবাজার চলে আসি। এখানে পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার সেরে রাতের ট্রেনে ফেনীতে ফিরে আসি। 

 


No comments:

Post a Comment