অপরূপ সৌন্দর্য্যের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও ছেড়া দ্বীপ ভ্রমণের এখনই উৎকৃষ্ট সময় - সাইফ ব্লগ

Latest

Saturday, December 7, 2019

অপরূপ সৌন্দর্য্যের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও ছেড়া দ্বীপ ভ্রমণের এখনই উৎকৃষ্ট সময়

সেন্টমার্টিন দ্বীপ অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ অংশে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলা থেকে ৯ কি.মি দক্ষিণে গড়ে ওঠা ছোট দ্বীপ এটি। মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম উপকূল থেকে ৮ কি.মি পশ্চিমে নাফ নদীর মুখে এর অবস্থান। স্থানীয়রা এটিকে ‘নারিকেল জিনজিরা’ নামে চেনে।




সেন্টমার্টিন দ্বীপ সমতল ও সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা থেকে ৩ দশমিক ৬ মিটার ওপরে। মূল ভূখণ্ড ও দ্বীপের মধ্যবর্তী ৯ দশমিক ৬৬ কি.মি প্রশস্ত প্রণালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের উন্মুক্ত সাগরের তুলনায় অনেক অগভীর। এখানে পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে ১০-১৫ কি.মি প্রবাল প্রাচীর। ভৌগলিকভাবে এটি তিনটি অংশে বিভক্ত।
উত্তরাঞ্চলীয় অংশকে বলা হয় নারিকেল জিনজিরা বা উত্তর পাড়া, এই অংশ ২ হাজার ১৩৪ মিটার দীর্ঘ ও ১ হাজার ৪০২ মিটার প্রশস্ত। দক্ষিণাঞ্চলীয় অংশটি দক্ষিণ পাড়া হিসেবে পরিচিত, যা ১ হাজার ৯২৯ মিটার দীর্ঘ এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বিস্তৃত একটি সংকীর্ণ লেজের মতো এলাকা, যার সর্বোচ্চ প্রশস্ততা ৯৭৫ মিটার। একটি সংকীর্ণ কেন্দ্রীয় অঞ্চল বা মধ্য পাড়া দুটি অংশকে সংযুক্ত করেছে। বেল্ট বা ফিতার মতো এই অঞ্চলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১ হাজার ৫২৪ মিটার ও ৫১৮ মিটার এবং সংকীর্ণতম অংশটি গলাচিপা নামে পরিচিত।



মূল দ্বীপ ছাড়াও এখানে ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ছেড়াদিয়া বা সিরাদিয়া নামে অভিহিত করা হয়, যার অর্থ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। উত্তর পাড়ার মাঝামাঝি অঞ্চলে একটি অগভীর উপহ্রদ রয়েছে এবং জোয়ারের সময় পশ্চিম তীরের একটি সংকীর্ণ নদীখাতের মাধ্যমে এর সঙ্গে সমুদ্রের সংযোগ ঘটে। উত্তর পাড়ার পৃষ্ঠমৃত্তিকা গঠিত হয়েছে বালি ও ঝিনুক-শামুকের খোলস সহযোগে। দক্ষিণ পাড়া অঞ্চলে রয়েছে দুটি ক্ষুদ্র মৃত উপহ্রদ ও একটি বিস্তৃত জলাভূমি। মাছ সংগ্রহস্থল, বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু উত্তর পাড়াতেই অবস্থিত।



টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের মধ্যে নিয়মিত লঞ্চ ও দেশি নৌকা চলাচল করে। দ্বীপের অধিবাসীর সংখ্যা ৩ হাজার ৭০০, যাদের অধিকাংশই মৎস্যজীবী। এই মৎস্যজীবী পরিবারের সংখ্যা ৫৩৫। দ্বীপে ১৮২টি বন্য জীব প্রজাতির অস্তিত্ব চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্বীপের উত্তরাংশে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাস পর্যটন মৌসুম। দ্বীপের সর্বাপেক্ষা ঘনবসতি পূর্ণ অংশ হলো জিনজিরা।
সমস্ত দ্বীপে স্বাদু পানির অভাব রয়েছে। শুধু অল্প কিছু পুকুর ও কিছুসংখ্যক নলকূপের মাধ্যমে সমগ্র দ্বীপে পানীয় জল আর চাষাবাদের জন্য স্বাদু পানি সরবরাহ করা হয়। সেন্টমার্টিনের প্রকৃত আনন্দ একরাত না থাকলে উপভোগ করা সম্ভব নয়। আরও ভালো হয় দুই রাত থাকলে। সেক্ষেত্রে একটি দিন ছেড়া দ্বীপের জন্য, আরেক দিন সেন্টমার্টিনের জন্য বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।
দ্বীপের কয়েক জায়গা বিশেষ করে পশ্চিম বিচ থেকে সাইকেল ভাড়া নেওয়া যায় ঘণ্টাপ্রতি ৬০-৮০ টাকায়। সাইকেল নিয়ে বিচ ধরে ঘোরা যাবে কিন্তু দ্বীপের সরু রাস্তায় ভ্যানের সঙ্গে চলতে পারবেন না। সেন্টমার্টিনে পিডিবি বা পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নেই। পুরোটাই জেনারেটর নির্ভর। রিসোর্ট-হোটেলগুলো সন্ধ্যা থেকে সাধারণত রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত জেনারেটর চালায়। দিনের বেলায় পানির পাম্প ছাড়ার জন্য কিছুটা সময় চালু রাখতে পারে। শীতকালে ফ্যান লাগে না বলে দিনে বিদ্যুতের অভাব টের পাওয়া যায় না। মোবাইল ফোন, ক্যামেরা ও ল্যাপটপ চার্জ করার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়।

কিভাবে যাওয়া যায়:
যেভাবে যাবেন : বাংলাদেশের যে কোনও স্থান থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার। কক্সবাজার থেকে প্রথমে জিপে চড়ে টেকনাফ, টেকনাফ থেকে সি-ট্রাক, জাহাজ কিংবা ট্রলারে চড়ে পৌঁছাবেন সেন্টমার্টিনে। প্রতিদিন ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায় দূরপাল্লার বেশ কিছু গাড়ি। বাসে ভাড়া লাগবে এসি ১২০০-১৪০০ এবং নন-এসি ৮০০-৯০০ টাকা। কক্সবাজার তো গেলেন তারপর বাসে ১৪০ টাকা, অথবা রিজার্ভ মাইক্রোবাসে সেন্টমার্টিন যেতে ভাড়া লাগবে পারেন (৮-১০ সিট)। প্রতিদিন সকাল থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ রুটে চলাচল করে এসব গাড়ি। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে আসা-যাওয়া করে সি-ট্রাক, কেয়ারি সিন্দাবাদ এবং ......................................। চমৎকার এসব জাহাজের পাশাপাশি ট্রলার ও চলাচল করে এই সমুদ্র রুটে। পছন্দসই বাহনে যেতে পারেন। তবে নিরাপদ জলযান হিসেবে কেয়ারি সিন্দাবাদ ও ............. নির্ভরযোগ্য। এসব জাহাজে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। অন্যদিকে প্রতিদিনই বিকাল ৩টায় এসব সাহাজ সেন্টমার্টিন ছেড়ে আসে। শীত মৌসুমে সমুদ্র শান্ত থাকে এবং গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুমে সমুদ্র উত্তাল থাকে, তখন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ।

ছেড়াদ্বীপ 

 ছেঁড়া দ্বীপ হলো বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু। দক্ষিণ দিকে এর পরে বাংলাদেশের আর কোনো ভূখণ্ড নেই।সেন্ট মার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তনবিশিষ্ট কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে 'ছেঁড়াদিয়া' বা 'সিরাদিয়া' বলা হয়ে থাকে। ছেঁড়া অর্থ বিচ্ছিন্ন বা আলাদা, আর মূল দ্বীপ-ভূখণ্ড থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন বলেই এ দ্বীপপুঞ্জের নাম ছেঁড়া দ্বীপ। 

এ দ্বীপে মানুষ বসবাস করেন না। তবে জেলেরা দিনের বেলা মৎস্য আহরণ করে রাতে নিজ নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। ছেঁড়াদিয়ার স্বচ্ছ জলের অনেক গভীরে অবস্থানরত নানা প্রজাতি ও ভিন্ন আকৃতির প্রবাল ও সামুদ্রিক শৈবাল অতিসহজে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে শরীর আনমনে পুলকিত হবে ও মন আনন্দে অজান্তে ঢোলা দেবে

 সাইফ ...

No comments:

Post a Comment