পূজার ছুটিতে ঘুরে আসুন বাংলার কাশ্মীর খ্যাত সুনামগঞ্জ - সাইফ ব্লগ

Latest

Tuesday, April 16, 2019

পূজার ছুটিতে ঘুরে আসুন বাংলার কাশ্মীর খ্যাত সুনামগঞ্জ


অতি প্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ সুনামগঞ্জ জেলা এককালে আসামের কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। বিশাল হাওর অঞ্চল এর সাথে উত্তরে খাসিয়া ও জৈন্তিয়া পাহাড় নিয়ে সিলেট বিভাগের এই জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর।

সুনামগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; টাঙ্গুয়ার হাওর, টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি, নীলাদ্রী লেক খ্যাত শহীদ সিরাজ লেক, শিমুল বাগান, বারিক টিলাবিপুল সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ সাজে সেজে আছে দেশের উওর পূর্ব দিকে অবস্থিত এই সুনামগঞ্জ জেলা।

নান্দনিক সৌন্দর্য আর শৈল্পের কারুকার্যে ভরপুর করে দিয়েছেন বিধাতা নিজেই। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে অবস্থিত বিশাল জলরাশির টাংগুয়ার হাওর, বারেক টিলা, যাদুকাটা নদী, লাউড় রাজ্যের ধংসাবাশেষ, পনাতীর্থ। নারায়ন তলা, ডলুরা শহীদের কবর, শহীদ মিনার, সীমান্ত হাট, খ্রীষ্টানদের মিশন, সীমান্ত ঘের্ষা পাহাড়, নদী, ছাতকের টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ড, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, সুনামগঞ্জের মরমী কবি হাছন রাজার মিউজিয়াম, দিরাইয়ে বাউল সাধক পুরুষ শাহ আব্দুল করিম, জগন্নাথপুরে রাধারমন এর কিছু নির্দশন। ঐতিয্যবাহী জুবিলী স্কুল, জেলা সদরের মোহাম্মদ পুরে ফিসারিজ সৌন্দর্যে অপরিসীম।মনমাতানো সৌন্দর্যে তাহিরপুরের টাংগুয়ার হাওর, আর সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ী মেঘ, বৃষ্টির প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ বিরাজ করছে বারেক টিলায়, যা আপনাকে দিতে পারে নয়ানাবিরাম নৈসর্গিক, প্রাকৃতিক সৌন্দযের্র আত্মতৃপ্তি। জেলা সদরের প্রবেশ পথেই রয়েছে মরমী কবি হাছন রাজার তোরন। যা আপনার ক্লান্ত মনটাকে একটু হলেও দোলা দেবে, যাদুকাটা নদী, লাউড়ের গড়, হাসান রাজার বাড়ি ইত্যাদি।

  টাঙ্গুয়ার হাওর 

টাংগুয়ার হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্রুপ জলমহালগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তেসুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা এবং তাহিরপুর উপজেলাস্থিত জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ মিঠা পানির এ হাওর বাংলাদেশের ২য় রামসার এলাকা।

ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া, জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে সারি সারি হিজল-করচ শোভিত, পাখিদের কলকাকলি মুখরিত টাংগুয়ার হাওর মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর এক বিশাল অভয়াশ্রম। বর্তমানে মোট জলমহাল সংখ্যা ৫১টি এবং মোট আয়তন ৬,৯১২.২০ একর। তবে নলখাগড়া বন, হিজল করচ বনসহ বর্ষাকালে সমগ্র হাওরটির আয়তন দাড়ায় প্রায় ২০.০০০ একর।

 

 

  টাংগুয়ার হাওর প্রকৃতির অকৃপণ দানে সমৃদ্ধ। এ হাওর শুধু একটি জলমহাল বা মাছ প্রতিপালন, সংরক্ষণ ও আহরণেরই স্থান নয়। এটি একটি মাদার ফিশারী। হিজল করচের দৃষ্টি নন্দন সারি এ হাওরকে করেছে মোহনীয়। এ ছাড়াও নলখাগড়া, দুধিলতা, নীল শাপলা, পানিফল, শোলা, হেলঞ্চা, শতমূলি, শীতলপাটি, স্বর্ণলতা, বনতুলসী ইত্যাদি সহ দু’শ প্রজাতিরও বেশী গাছগাছালী রয়েছে এ প্রতিবেশ অঞ্চলে। জেলা প্রশাসনের কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বর্তমানে এ হাওরে রয়েছে ছোট বড় ১৪১ প্রজাতির ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির কচ্ছপ, ৭ প্রজাতির গিরগিটি এবং ২১ প্রজাতির সাপ।নলখাগড়া বন বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। শীত মৌসুমে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ব্যাপক পাখির আগমন ও অবস্থানে মুখরিত হয় টাঙ্গুয়ার হাওর। বিলুপ্ত প্রায় প্যালাসেস ঈগল, বৃহদাকার গ্রে-কিংষ্টর্ক, শকুন এবং বিপুল সংখ্যক অতিথি পাখি ছিল টাঙ্গুয়ার হাওরের অবিস্মরণীয় দৃশ্য। স্থানীয় জাতের পাখি পানকৌড়ি, কালেম, বৈদর, ডাহুক নানা প্রকার বালিহাঁস, গাংচিল, বক, সারস প্রভৃতির সমাহারও  বিস্ময়কর। সাধারণ হিসাবে বিগত শীত মৌসুমের প্রতিটিতে ২০/২৫ লক্ষ পাখি টাঙ্গুয়ার হাওরে ছিল বলে অনুমান করা হয়। কোন কোন স্থানে  কিলোমিটারের বেশী এলাকা জুড়ে শুধু পাখিদের ভেসে থাকতে দেখা যায়। টাঙ্গুয়ার হাওর মাছ-পাখী এবং উদ্ভিদের পরস্পর নির্ভরশীল এক অনন্য ইকোসিস্টেম। মাছের অভয়াশ্রম হিসাবে এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী।  

কিভাবে যাওয়া যায়:

বর্ষাকালে শহরের সাহেব বাড়ি নৌকা ঘাট থেকে ইঞ্জিন বোট বা স্পীড বোট যোগে সরাসরি টাঙ্গুয়া যাওয়া যায়। ইঞ্জিন বোটে ৫ ঘন্টায় এবং স্পীড বোটে ২ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে ইঞ্জিন বোটে খরচ হয় ২,০০০/- থেকে ২,৫০০/- টাকা পক্ষান্তরে স্পীড বোডে খরচ হয় ৭,৫০০/- থেকে ৮,০০০/- টাকা। বেসরকারী ব্যবস্থায়পনায় সেখানে রাত্রি যাপনের কোন ব্যবস্থা নেই তবে সরকারী ব্যবস্থাপনায় ৩ কিঃ মিঃ উত্তর-পূর্বে টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের রেস্ট হাউজে অবস্থান করা যায়। গ্রীষ্মকালে শহরের সাহেব বাড়ি খেয়া ঘাট পার হয়ে অপর পার থেকে প্রথমে মোটর সাইকেল যোগে ২ ঘন্টায় শ্রীপুর বাজার/ডাম্পের বাজার যেতে হয়। ভাড়া ২০০ টাকা। সেখান থেকে ভাড়াটে নৌকায় টাঙ্গুয়া ঘরে আসা যায়। সেক্ষেত্রে ভাড়া বাবদ ব্যয় হতে পারে ৩০০-৪০০/- টাকা।

নীলাদ্রি হ্রদ 

 নীলাদ্রি লেক (Niladri Lake) খ্যাত দর্শনীয় স্থানটি মূলত সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাটের চুনাপাথরের একটি পরিত্যাক্ত খনির লাইম স্টোন লেক। এর পানি অনেক নীল হওয়ার কারণে এর নাম দেওয়া হয়েছে নিলাদ্রী লেক। লেকের পাড়ে অনেক টিলা রয়েছে। এটিকে বাংলার কাশ্মীরও বলা হয়।

 

অনেকেই সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে যান। কিন্তুু এর আশেপাশেই অনেক সুন্দর সুন্দর নয়নাভিরাম জায়গা আছে যা যে কোনো পর্যটকের মনকে মুহূর্তেই দোলা দিয়ে যেতে পারে !

এমনই একটি জায়গা টেকেরঘাট চুনাপাথরের পরিত্যক্ত খনির লাইমস্টোন লেক। স্থানীয় লোকজন একে নীলাদ্রি লেক বলেই জানে ।এর নামটা যেমন সুন্দর এর রূপটাও তেমনি মোহনীয় । নিজ চোখে না দেখলে হয় বিশ্বাসই করতে পারবেন না পানির রঙ এতটা নীল আর প্রকৃতির এক মায়াবী রুপ। মাঝের টিলা গুলা আর ওপাড়ের পাহাড়ের নিচের অংশটুকু বাংলাদেশ এর শেষ সীমানা। বড় উচু পাহাড়টিতেই সীমানা কাটা তারের বেড়া দেওয়া আছে। এই লেকটি এক সময় চুনা পাথরের কারখানার কাচামাল চুনা পাথরের সাপ্লাই ভান্ডার ছিল যা এখন বিলীন।

 কিভাবে নীলাদ্রি দর্শনে যাবেন ?

সুনামগঞ্জ থেকে লাউড়ের গড় পযন্ত মোটর সাইকেলে করে যেতে পারেন ভাড়া ২০০ টাকা । তারপর যাদুকাটা নদী পাড় হয়ে বারিক্কা টিলা থেকে ১২০ টাকা ভাড়ায় টেকেরঘাট যেতে পারবেন। এখানে উল্লেখিত মোটর সাইকেল এর ভাড়া যেটা উল্লেখ আছে, তা দিয়ে বাইকের দুইজন যাত্রীই যেতে পারবেন। তবে মোটর সাইকেলের ভাড়া নিয়ে আগেই দামাদামি করে নিলে ঠকবেন না। এরা দাম কিছুটা বাড়িয়ে বলে অপরিচিত মুখ দেখলে।

    বারেকের টিলা

 জেলা শহর সুনামগঞ্জ থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নান্দনিক সৌন্দর্য্যে ঘেরা বারেক টিলায় ভ্রমনে আসেন প্রকৃতি প্রেমিরা। সারাদিন নাচ গান হৈ হুল্লর,ছবি তোলা রাতে নিজেদের রান্না করা খাবার আর আনন্দের যেন অন্ত নেই। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত হতে কলেজ ও ভার্সিটির ছাত্রছাত্রীসহ ভ্রমণ পিপাসুদের নৌ-বিহারে প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠেছে যাদুকাটার বুক। দর্শনার্থীদের কেউ মায়ার নদী কেউবা রুপের নদী বলে অভিহিত করেন এই নদীকে। বর্ষায় পাহাড়ি নদী যাদুকাটার বহমান স্রোতধারায় নিজেকে ভাসিয়ে দিতে ভীড় জমায় প্রকৃতি প্রেমিরা। আর হেমন্তে শুকিয়ে যাওয়া যাদুকাটার বুক জুড়ে ধুধু বালিচরে প্রিয়জন নিয়ে হেটে চলা ও যাদুকাটার স্বচ্ছ পানিতে গা ভাসিয়ে দিয়ে পরমতৃপ্তি  বোধ করেন পর্যটকরা। যাদুকাটা নদী থেকে হাত রাখলেই ছোঁয়া যায় শ্বাশত সবুজে ঘেরা বারেক টিলা। বারেক টিলায় ঘুরে ঘুরে যাদুকাটা নদীর প্রকৃত রুপ উপভোগ করা সম্ভব। বারেক টিলায় আদি বাসীদের একটি গ্রাম রয়েছে। সে গ্রামের নাম আনন্দনগর। সেই গ্রামের শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা সহজ সরল ও আপ্যায়ন প্রিয়। বারেকটিলার সবুজ বনায়ন ও চারপাশে নদী, পাহাড় ও হাওরের মনোরম দৃশ্যে মন হারিয়ে যায় ভ্রমণ প্রেমিদের। যাদুকাটা নদীর তীরঘেঁষে পূর্ব-উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সফরসঙ্গী হযরত শাহ আরেফিন (রহ) এর আস্তানা। নান্দনিক সৌন্দর্য্যে ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিদিনই বিকালে পরিবার পরিজন নিয়ে সময় কাটাতে আসেন অনেকেই। 

 

কিভাবে যাওয়া যায়:

বর্ষায় সুনামগঞ্জ শহরের সাহেব বাড়ি নৌকা ঘাট হতে ইঞ্জিন নৌকা বা স্পিডবোট যোগে সরাসরি বারেকটিলা ও যাদুকাটায় যাওয়া যায়। সময় লাগবে ৪৫ মিনিট। খরচ হবে যাওয়া আসায় ৭-৮ হাজার টাকা। ইঞ্জিন নৌকায় খরচ হবে ২-৩ হাজার টাকা। সময় লাগবে ৩ ঘণ্টা।
 বছরের যেকোন সময় সুনামগঞ্জ বৈঠাখালি খেয়া ঘাট হতে মোটরসাইকেল যোগে সরাসরি যাদুকাটা ও বারেক টিলা যেতে সময় লাগবে ৪৫ মিনিটি, টাকা খরচ হবে জনপ্রতি ২০০টাকা। সরকারি বা বেসরকারি কোন উন্নত মানের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় সারাদিন ঘুরে ফিরে সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ শহরে ফিরে যেতে পারেন। সেখানে রয়েছে আধুনিক রেস্ট হাউজ, হোটেল রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য সুবিধা ।


শিমুল বাগান

  হাওর, পাহাড়, আর নদী সমৃদ্ধ তাহির পুরের নতুন আকর্ষণ শিমুল বাগান। যাদুকাটা নদীর পাড়ের এই বাগান এখন পর্যটকদের বাড়তি বিনোদন দিচ্ছে।

মাঘের শুরু থেকেই ওই বাগানের শিমুল গাছগুলো রক্তিম আভা ছড়াচ্ছে।  সারিবদ্ধভাবে লাগানো শিমুল গাছগুলো ফুলের পসরা সাজিয়েছে। যা কী না মনোমুগ্ধকর!
পাপড়ি মেলে থাকা শিমুলের রক্তিম আভা আর শুবাস মন রাঙ্গিয়ে ঘুম ভাঙ্গায় সৌখিন হ্নদয়ে এ যেনো কল্পনার রঙ্গে সাজানো এক শিমুলের প্রান্তর। সেই সোন্দর্য উপভোগ করতে এই সময় দল বেঁেধ হাজার হাজার পর্যটক ও দশনার্থীরা ছুঠে আসছেন।


সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মানিগাঁঁও গ্রাম সংলগ্ন এই শিমুল বাগানটি অবসর কাটানোর আদর্শ জায়গা যেনো।

এক পাশে শিমুল বাগান। ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। মাঝে চোখ জুড়ানো মায়াবী যাদুকাটা নদী। সব মিলে মিশে মানিগাঁও গ্রামটি অপরুপ এক কাব্যিক ভাবনার প্রান্তর।
যদিও বাণিজ্যিক চিন্তা থেকেই যাদুকাটা নদীর পাড়ে গড়ে তৈরি করা শিমুল বাগান। বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে এই শিমুল বাগানে সারি সারি গাছের সবুজ পাতার সুনিবির ছায়ায় পর্যটকদের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। আর বসন্তের ডালে ডালে ফুটে থাকা রক্ত মাখা লাল ফুলে আন্দোলিত করে পর্যটকদের মন। বর্ষা, বসন্ত কিংবা হেমন্ত। একের ঋতুতে এর এক এক রূপ।
২০০২ সালে বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামের যাদুকাটা নদী সংলগ্ন ৯৮ বিঘা অনাবাদী জমি কেনেন। তখন সেটি ছিল বালুময়। বালুময় ওই জায়গাটিতে তিন হাজার শিমুলের চারা রোপন করা হয়।

লাকমাছড়া 
সুনামগঞ্জের ট্যাকেরঘাটের খুব কাছেই লাকমাছড়া। এই এলাকাটি ঘুরে দেখার জন্য মোটরবাইক ঠিক করা যায়। ট্যাকেরঘাট থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটে বাইক নিয়ে যাওয়া যাবে লাকমাছড়ায়।
জাফলং আর বিছানাকান্দির মতই জলরাশি আর পাহাড়ে ঘেরা জায়গাটি। তবে এখনো খুব বেশি পর্যটক এখানে যাননি বলে পরিবেশটা বেশ নির্মল।
তবে চুনাপাথর আর কয়লা সংগ্রহকারী শ্রমিকদের আনাগোনা সব সময়েই থাকে এখানে। কোনো কোলাহল নেই, মানুষের ভিড় নেই, ময়লা আবর্জনা নেই বলে যে দিকে এগিয়ে যাবেন মুগ্ধ হবেন।
এখানে মেঘালয় পর্বতমালা থেকে প্রবাহিত ঝর্ণা ধারার পানি নেমে আসে। তবে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি বাড়ে।
বিশাল বিশাল আকারের সব পাথর পাবেন পুরো এলাকা জুড়ে। চার পাশে মেঘালয় পর্বতের সারি। ধাপে ধাপে নেমে আসা পাহাড়। সেই সাথে পাহাড়ের কোল জুড়ে সাদা ঝর্ণা।
পাহাড়ের গায়ে গড়ে উঠেছে অদ্ভুদ সুন্দর ঘরবাড়ি। পাহাড় কেটে বানানো রাস্তায় গাড়িও চলতে দেখবেন। 

 জাদুকাটা নদী 
 ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে উত্পত্তি হওয়া জাদুকাটা নদীটি সুনামগঞ্জের একটি অপরূপ নদী। বর্ষাকালে এই নদীটি অনেক প্রশস্ত হয়ে যায়। জাদুকাটা নদীর স্বচ্ছ নীল জল এতটাই স্বচ্ছ যে, নদীর তীর থেকেই আপনি নদীর তলদেশ দেখতে পাবেন। নদীর তীরে সবখানেই বড় পাথর খণ্ডের সাথে দেখা মিলবে আপনার। নদীটির পাশেই প্রায় ১৫০ ফুট উচ্চতার একটি টিলা রয়েছে। স্থানীয়রা এই টিলাটিকে বারেক টিলা বলে থাকে। এই টিলায় অবস্থিত পিলারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এই টিলার ওপর থেকে সবকিছুই দেখতে বেশ ক্ষুদ্র লাগে। জেলা শহর সুনামগঞ্জ থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নান্দনিক সৌন্দর্যে ঘেরা জাদুকাটা নদী ও বারেক টিলায় ভ্রমণে আসেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। সারাদিন নাচ-গান, হৈ-হুল্লোড়, ছবি তোলা, রাতে নিজেদের রান্না করা খাবার—আনন্দের যেন অন্ত নেই। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুদের নৌ-বিহারে প্রাণোচ্ছ্বল হয়ে ওঠে জাদুকাটার বুক। দর্শনার্থীদের কেউ মায়ার নদী কেউ বা রূপের নদী বলে অভিহিত করেন এই নদীকে। বর্ষায় পাহাড়ি নদী জাদুকাটার বহমান স্রোতধারায় নিজেকে ভাসিয়ে দিতে ভিড় জমায় প্রকৃতিপ্রেমীরা। আর হেমন্তে শুকিয়ে যাওয়া জাদুকাটার বুকজুড়ে ধূ ধূ বালুচরে প্রিয়জন নিয়ে হেঁটে চলা ও জাদুকাটার স্বচ্ছ পানিতে গা ভাসিয়ে দিয়ে পরমতৃপ্তি বোধ করেন পর্যটকরা। জাদুকাটা নদী থেকে হাত রাখলেই ছোঁয়া যায় শ্বাশত সবুজঘেরা বারেক টিলা। বারেক টিলায় ঘুরে ঘুরে জাদুকাটা নদীর প্রকৃত রূপ উপভোগ করা সম্ভব।

লেখকঃ সাইফুল ইসলাম
            এম এসসি (গণিত)