কম খরচে ডাউকি, শিলং ও চেরাপুঞ্জি ভ্রমণ - সাইফ ব্লগ

Latest

Monday, April 15, 2019

কম খরচে ডাউকি, শিলং ও চেরাপুঞ্জি ভ্রমণ

যেসব প্রকৃতিপ্রেমী তুলনামূলক কম খরচে দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে আগ্রহী তাদের জন্য আদর্শ পছন্দ হতে পারে মেঘালয়।
জীবনের একঘেয়েমি ক্লান্তিকর মুহূর্ত গুলোকে আড়াল করতে ঘুরে আসতে পারেন মেঘ, পাহাড়-পর্বত, ঝর্ণা আর জলপ্রপাতের রাজ্য ভারতের স্কটল্যান্ড খ্যাত মেঘালয়ের শিলং ও পৃথিবীর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের এলাকা চেরাপুঞ্জি থেকে। বাংলাদেশ সিলেট সীমান্ত থেকে চেরাপুঞ্জি সোজাসুজি বিশ কিলোমিটারেরও কম। বাড়ির পাশেই বিশ্বের বৃষ্টিবহুল এই এলাকা, সেখানে আষাঢ় কিংবা শ্রাবণের বৃষ্টি উপভোগ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।












মেঘালয় হচ্ছে মেঘেদের বাড়ি। কবিদের অনুপ্রেরনার ও চিত্রকরদের ক্যানভাস। বেড়ানোর জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা। মেঘালয় ছবির মত সুন্দর একটি রাজ্য। ক্যালচার ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, মেঘের সমাবেশ, জীবনের কিছু রঙ্গিন মুহুত্ব কাটানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা। মেঘালয় ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত উত্তর পূর্ব অঞ্চলে অত্যতম একটি সুন্দর রাজ্য। ২১ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে এটিকে রাজ্য হিসাবে ঘোষনা করা হয়। চোখ জুড়ানো পাহাড়ি দৃশ্য আর শীতল আবহাওয়ার কারণে এ রাজ্যের রাজধানী শিলং শহরকে বলা হয় ‘প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড’। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে শহরটির উচ্চতা প্রায় ১,৫০০ মিটার। বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল স্থান চেরাপুঞ্জিও মেঘালয়েই অবস্থিত। এ রাজ্যের ভৌগলিক কাঠামো অনেকটা পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, সিকিম ও হিমাচল প্রদেশের মতো। তবে উল্লিখিত তিনটি জায়গার তুলনায় মেঘালয়ে বেড়ানোর খরচ তুলনামূলক অনেক কম। পুরোটাই ঘন সবুজ বনানীতে আচ্ছাদিত এই রাজ্যের নয়নাভিরাম পাহাড়ি দৃশ্য, দৃষ্টিনন্দন লেকসমূহ, নদী অববাহিকা, বিচিত্র প্রজাতির পশুপাখি সবকিছুই এককথায় অসাধারণ।


প্রয়োজনীয় তথ্য:
মেঘালয়ে আপনি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়ও যেতে পারেন আবার সহায়তা নিতে পারেন নির্ভরযোগ্য কোনো ট্যুর অপারেটরের। দ্বিতীয়টি বেছে নিলে আপনাকে ভিসার আনুষ্ঠানিকতা, যাতায়াত ও থাকা-খাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। যদিও এতে খরচটা একটু বেশি পড়বে তবে আপনার ভ্রমণ হবে অনেক নিরাপদ এবং দক্ষ ট্যুরিস্ট গাইডের সঙ্গও পাবেন। তবে নিজ ব্যবস্থাপনায় গেলে একটু সতর্ক থাকতে হবে। ভালো ইংরেজি জানলে তা খুব কাজে লাগবে কারণ মেঘালয়ে এই ভাষার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। অবশ্য শিলং শহরে অনেক বাংলাভাষী লোকজনও পাবেন। হোটেল ও ড্রাইভার দুটির ক্ষেত্রেই বাঙালি কিংবা নেপালিদের বেছে নেওয়ার এবং খাসিয়াদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। হোটেল রুম এবং ট্যাক্সি রিজার্ভের সময় সুনিপুণভাবে দরদাম করতে ভুলবেন না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাতে বাইরে ঘোরাঘুরি এড়িয়ে চলুন। কারণ রাতের শিলং কিন্তু দিনের মতো নিরাপদ নয়। তামাবিল সীমান্তে যাওয়ার আগেই খেয়াল করে সোনালী ব্যাংকে ভ্রমণ কর পরিশোধ করুন। ডাউকি বাজারে মানি এক্সচেঞ্জ আছে যেগুলো থেকে আপনার যাত্রাপথের খরচের জন্য প্রয়োজনীয় ভারতীয় রুপির ব্যবস্থা করতে পারবেন।
মেঘালয় ভ্রমণ সম্পর্কে এখানে দুটি ভাগে সব বিষয় আলোচনা করব। একটা হচ্ছে পর্ব-১ (পূর্বপ্রস্তুতি) যা দেশে থেকেই করতে হবে। যেমন পাসপোর্ট, ভিসা, টাকা/ডলার, ভ্রমণসঙ্গী, পোষাক ইত্যাদি। আর একটা হচ্ছে পর্ব-২ (ভ্রমণপর্ব) । এখানে থাকবে যাতায়াত, বর্ডার ইমিগ্রেশন, হোটেল, খাবার, দর্শনীয় স্থান, শপিং, ইন্টারনেট ইত্যাদি। আর সব ভাগেই খরচের একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব আপনাদের সুবিধার্থে।

পার্ট-১ (পূর্বপ্রস্তুতি)

আপনি মেঘালয় ভ্রমণ করবেন বলে ঠিক করেছেন। এখন আপনাকে মেঘালয়ের জন্য রওনা হওয়ার আগে কিছু কিছু জিনিস নিশ্চিত করতে হবে। চলুন জেনে নিই এই ট্যুরের জন্য কি কি লাগবে। আর এগুলো শুধু মেঘালয় ভ্রমণ নয় মোটামুটি সব দেশে ভ্রমণের জন্যই প্রযোজ্য
  • পাসপোর্ট ও ভিসা
  • ভ্রমণ কর
  • টাকা/ডলার
  • ভ্রমনের উপযুক্ত সময়
  • ভ্রমণসঙ্গী
  • পোষাক
  • অন্যান্য
 পাসপোর্ট ও ভিসা:
বিদেশ ভ্রমনের জন্য আপনার একটি পাসপোর্ট ও সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা থাকা আবশ্যক। তাই আপনার যদি পাসপোর্ট না থাকে তাহলে পাসপোর্ট করে নিন। শিলং/মেঘালয় সিলেট দিয়ে যেতে চাইলে ভিসা এপ্লিকেশনের পোর্ট অব এন্ট্রি-এক্সিট অবশ্যই ‘BY ROAD DAWKI’ সিলেক্ট করবেন।

ভ্রমণ কর/ট্রাভেল ট্যাক্স

বাংলাদেশ থেকে বিদেশ ভ্রমণ করলে সরকারকে ভ্রমণ কর বা ট্রাভেল ট্যাক্স দিতে হয়। স্থলপথে ভ্রমণ করের পরিমাণ ৫০০ টাকা যা আগে থেকেই বা বর্ডারে সোনালি ব্যাংকের বুথে জমা দিতে হয়। আমার মতে বর্ডারে সময় ও ঝামেলা এড়াতে যাত্রা শুরুর আগেই ভ্রমণ কর দিয়ে দেয়া উচিৎ। ডাউকিতে ভ্রমণ কর নেয়ার কোন সিস্টেম নেই।


ভ্রমনের উপযুক্ত সময়

শিলং ও চেরাপুঞ্জির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। আর একারণেই বর্ষার সিজনই উপযুক্ত সময় মেঘালয়ে বেড়াতে যাওয়ার। তাই মে থেকে অক্টোবরই ভাল সময়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এখানে প্রচুর শীত পড়ে (৫-১৫ ডিগ্রী মাত্র)। এখন আপনি আপনার সুবিধামত সময় বেছে নিন।

ভ্রমণসঙ্গী

ভারতের যেকোন জায়গায় বা দেশেও যেখানেই যাননা কেন সব জায়গায় নির্দিষ্ট সংখ্যক ভ্রমণসঙ্গী নির্বাচন করা খুবই জরুরি। আর সংখ্যা নির্বাচন করতে হয় উক্ত জায়গায় প্রাপ্ত গাড়ির উপর নির্ভর করে। মেঘালয়ে সাধারণত ছোট ট্যাক্সি (মারুতি সুজুকি) পাওয়া যায় যাতে ৪ জন বসা যায় আরামে। আর ৬ জন ও ৮-৯ জনের জন্য আছে বড় জিপ গাড়ি (টাটা সুমো)। তাই আপনি খরচ কমাতে এভাবে ভ্রমণসঙ্গী ঠিক করুন।
যদি বন্ধুরা বা পরিচিতদের নিয়ে ট্যুরে যান তাহলে তো ভালই। তবে তা সম্ভব না হলে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ থেকে খুঁজে নিতে পারেন কাংখিত ভ্রমণসঙ্গী। আমি এমন একটা গ্রুপের সাথে গিয়েছিলাম। তবে এভাবে অনলাইন গ্রুপের সাথে গেলে অবশ্যই আগে অফলাইনে সাক্ষাৎ করে নিবেন। আর সবার সাথে আপনার পছন্দের মিল-অমিল দেখে নিন। আর ভ্রমণের পূর্বে সম্ভব হলে সবার পাসপোর্ট ও ভিসার ফটোকপি বা স্ক্যান কপি সবাই শেয়ার করে নিন। আর নিকটজন কাউকে দিয়ে রাখুন।

দর্শনীয় স্থানসমুহ

প্রথমেই জেনে নেই মেঘালয়/শিলং এর দর্শনীয় স্থানগুলো। এখানে জায়গাগুলো এক এক দিনের প্যাকেজ হিসেবে দেয়া হল। আপনি আপানার মত সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার প্ল্যান।

দিন ১ (ডাউকি)

নোহওয়েট লিভিং রুট ব্রিজ
মাউলিলং ভিলেজ
বোরহিল ঝর্ণা
উমক্রেম ঝর্ণা
স্নোনেংপেডেং ভিলেজ
উমগট রিভার

দিন ২ (ডাউকি)

ক্রাংসুরি ঝর্ণা
চেরাপুঞ্জি গমণ

দিন ৩ (চেরাপুঞ্জি)

ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ
মৌসিমাই কেভ
সেভেন সিস্টার্স ঝর্ণা
ইকো পার্ক
নুকায়কালী ফলস

দিন ৪ (শিলং শহর)

শিলং পিক
লেডি হায়াদ্রি পার্ক
ডন বস্কো মিউজিয়াম
উমিয়াম লেক
ক্যাথিড্রাল চার্চ
গলফ কোর্স
ওয়ার্ডস লেক

৫ম দিন

এদিন আসার সময় এলিফেন্ট ফলস দেখে আসুন। তা না চাইলে আগের দিনই এটা দেখে নিন। কিন্তু ডাউকি বর্ডারে ফিরে আসার পথে এইটা পড়ে।

সবগুলো জায়গা ৩ দিনেও ঘুরা সম্ভব।

যাতায়াত

এখানে যাতায়াত নিয়ে আলোচনা করব।
ঢাকা-সিলেট
প্রথমে ঢাকা থেকে যেকোন এসি/নন-এসি বাসে চলে যান সিলেট। নন-এসি বাসের ভাড়া ৪৭০ টাকা। বাসগুলো রাত ১০ টা থেকে ১২ টার মাঝে ছেড়ে যায় ও সকাল ৫:০০ থেকে ৬ টায় পৌছে যায়। আমাদের বাস রাত ১১:০০ টায় ফকিরাপুল থেকে ছেড়ে পৌছেছিল সকাল ৫:০৫ এ।
সিলেট-তামাবিল বর্ডার
সিলেট বাসস্ট্যান্ড থেকে জাফলং এর বাস যায়। আপনারা কদমতলি থেকে জাফলংগামী বাসে উঠে পড়ুন। সময় লাগবে দু ঘন্টার মত। ভাড়া ৬০ টাকা।
ডাউকি বর্ডার
এখান থেকে কেউ শিলং যেতে চাইলে লোকাল শেয়ারড ট্যাক্সি আছে। তবে আমরা সব জায়গায় রিজার্ভ ট্যাক্সিতে গিয়েছি বিধায় সেভাবেই বলছি সব।
ঘুরাঘুরির জন্য মেঘালয়ে আপনাদের লোকজনের উপর নির্ভর করে ট্যাক্সি নিতে পারেন। আমরা রিজার্ভ ট্যাক্সি নিয়েই ঘুরেছি সব দিন। এতে ব্যাগ ট্যাক্সিতে রেখে নিশ্চিন্তে ঘোরা যায়। ওরা সাধারণত সারাদিন লোকেশন ঘুরিয়ে আনতে ২০০০-২৫০০  রুপি নেয় (সারাদিন)। আর কোথায় শুধু ড্রপ করে দিতে ১৫০০-১৮০০ নেয় (আধাদিন)। 



written by - saiful islam bhuiyan
m.sc(math)
assistant teacher (math)
agrani high school,feni

No comments:

Post a Comment