দ্বীপ কন্যা (Queens of Island ) খ্যাত ভোলার অনিন্দ্য সুন্দর এক দ্বীপ হল চর কুকরি মুকরি। শুরুর দিকে এ চরে কুকুর আর মেকুরের (বিড়াল) অধিপত্য এতই বেশি ছিল যে এর নামকরন করা হয় চর কুকরি মুকরি। নামটাতে কিছু একটা আছে, ‘গাঢ় মৌন আহবান’ জাতীয় কিছু, নেশার মত টানে।
কিভাবে যাবেনঃ
চর কুকরি মুকরিতে যেতে নদী পথ হচ্ছে সবচেয়ে সহজ উপায়। নদী পথে যাতায়াতে খরচ ও শারীরিক কষ্ট কম হয়। ঢাকার সদরঘাট থেকে বেতুয়াঘাট, চরফ্যাসন গামী লঞ্চে উঠতে হবে। এই পথে তাসরিফ, কর্ণফুলী, ফারহান ইত্যাদি লঞ্চ নিয়মিত যাতায়াত করে। এসব লঞ্চের ডেকের ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ভাড়া নিতে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা লাগে। ঘাট থেকে ১০০ টাকা মোটর সাইকেল ভাড়া করে কিংবা ৪০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়ায় টেম্পোতে চরে চরফ্যাশন সদরে এসে সেখান থেকে ৩০ টাকা বাস ভাড়া অথবা ১৫০ টাকা মোটর সাইকেল ভাড়ায় দক্ষিণ আইচা আসুন।
ঢাকার গুলিস্তান/যাত্রাবাড়ি/ফার্মগেইট জাতীয় মহাসড়কে হয়ে লক্ষ্মীপুর এসে মজুচৌধুরীর হাট হয়ে চরফ্যাশন বা ঢাকা থেকে মাওয়া ফেরিঘাট হয়ে বরিশাল এসে সেখান থেকে স্প্রীড বোর্ড অথবা লঞ্চ অথাব বাস যোগে চরফ্যাশন উপজেলা।
দক্ষিন আইচা থেকে ১০ থেকে ১৫ টাকায় টাকায় টেম্পো বা মোটরসাইকেল ভাড়ায় চর কচ্ছপিয়া যেতে পারবেন। চর কচ্ছপিয়া থেকে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় ট্রলারে চেপে অথবা অথবা ১৫০ টাকা ভাড়ায় স্পীডবোটে চেপে পৌঁছে যাবেন চর কুকরি-মুকরি। এছাড়া ট্রলার রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন এক্ষেত্রে আপনাকে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ করতে হবে।
লঞ্চের টিকেট কাটতে সরাসরি নাম্বার সমূহে যোগাযোগ করুনঃ
ফারহানঃ ০১৭৯৮২৮৮৬৯২/ ০১৭৯৮২৮৮৬৯৩/০১৭৯৮২৮৮৬৯৪
কর্ণফূলীঃ ০১৭৯৮৫১৬৭২৬ / ০১৭৭৯৯৭২৬৪০
তাসরিফঃ ০১৭১২৩৯৩৮১২ / ০১৭৮২৪৭৬৩৭৯
কোথায় থাকবেন?
কুকরী-মুকরিতে হোমস্টে সার্ভিস চালু রয়েছে সেখানে থাকতে পারবেন। এছাড়া বন বিভাগের রেস্ট হাউসে অনুমতি নিয়ে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। রেস্ট হাউজে থাকতে চাইলে আগেই জানিয়ে যাওয়া ভালো। রেস্ট হাউসের রুমগুলোর ভাড়া ২০০০-৫০০০ টাকা। হোম স্টের ক্ষেত্রে জন প্রতি ২৫০-৫০০ টাকা ভাড়ায় থাকতে পারবেন। হোম স্টে সার্ভিসের জন্য যোগাযোগের ফোন নম্বর- ০১৭৪৬৭৬৫৯৫৯, ০১৭১১৫৮০৬৮০
চরফ্যাশনে থাকার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের কিছু সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে সরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকার জন্যে রয়েছে উন্নতমানের -
- জেলা পরিষদ ডাকবাংলো - চরফ্যাশন।
চর কুকরি মুকরিতে ২টি আবাসিক হোটেল ও একটি আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট এর ব্যবস্থা রয়েছে। তা ছাড়া থাকার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে উঠতে পারেন। সেখানকার চেয়ারম্যান বা তার সেক্রেটারির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া বাজারে যে দুইটি খাবারের হোটেল আছে তাদের বললেও কোন বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিবে ৷
তবে সবচেয়ে সহজ আর মজাদার থাকার ব্যবস্থা হলো চরে ক্যাম্প করে থাকা। এতে খরচ যেমন বাঁচবে, সাথে পাবেন প্রাকৃতিক এক অন্যরকম ভিন্ন পরিবেশ। এই চরের যেখানে খুশি ক্যাম্প করতে পারেন, সম্পূর্ণ নিরাপদ। ক্যাম্প করার জন্য এখানে আছে, বিশাল জায়গা। আপনি যেখানে ইচ্ছা ক্যাম্প করতে পারবেন। তবে বনের ভিতরে ক্যাম্প করা থেকে বিরত থাকবেন। বনের পাশে বিশাল বালুর চর যেখানে ইচ্ছে ক্যাম্প করতে পারেন।
মূল চরের আগে একটি খাল আছে তা পার হয়ে ৩০০-৪০০ মিটার সামনের কিছু জায়গা আছে বনের পাশে গাছের ছায়ায় সেখানে ক্যাম্প করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই স্থানীয় কারো কাছে জোয়ারের পানি কতদূর পর্যন্ত আসে তা জেনে নিবেন। এখন পর্যন্ত যারা ব্যাকপ্যাকিং করেছেন তারা সবাই এখানেই ক্যাম্প করেছিলেন। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের মাঠেও ক্যাম্প করতে পারেন। সাইক্লোন শেল্টার ও দুটি এনজিওর অফিস আছে - সেখানেও থাকতে পারবেন।
কোথায় ঘুরবেনঃ
কুকরি তে নারকেল বাগান, বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন খালের মোহনায় রঙ্গিন নৌকায় চেপে প্রকৃতি ও প্রতিবেশ দর্শন যেখানে ভাগ্য ভালো হলে হরিণের দেখা পেয়ে যেতে পারেন। তারুয়া দ্বীপের লম্ব সমুদ্র সৈকতে স্থান ও রাতে সৈকত তীরবর্তী বনে ক্যাম্পিং করতে পারেন। এছাড়া সমুদ্রে মৎস্য আহরণ, ট্রেইল ট্রাকিং, সি ফুড উপভোগ সহ সোনারচর, শিবচর, মুজিব কেল্লা, মনুয়া বাজার, ওয়াচ টাওয়ার,চেয়ারম্যানের ঘের ও বড় একটা বনের মধ্য দিয়ে নতুন তৈরী রাস্তা।এখানে ঘুরতে হলে বাইকেই ঘুরতে হয়।আর কখনো কখনো নৌকায়।দু’টো দিন যদি শহরের কোলাহল ছেড়ে সাগর বেষ্টিত বন্য পরিবেশের হাতছানি পেতে চান তাহলে চরকুকরী মুকরী উল্লেখযোগ্য স্থান বলে বিবেচিত হবে।
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে বেড়াতে পারেন; এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো -
- তারুয়া সমুদ্র সৈকত - জেলা সদর থেকে দেড়শ কিলোমিটার দূরে তারুয়া সমুদ্র সৈকতের অবস্থান; একশত পয়ত্রিশ কিলোমিটার পাকা সড়কের পর পনের কিলোমিটার নৌপথ পেরিয়ে সেখানে যেতে হয়।
- জ্যাকব ওয়াচ টাওয়ার - ভোলা জেলা শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে ওয়াচ টাওয়ারটি অবস্থিত।
- বেতুয়া সমুদ্র সৈকত;
- ফ্যাশন স্কয়ার;
- চরফ্যাশন শিশু পার্ক।
No comments:
Post a Comment