দেখে আসুন রামগড়ের পাহাড়ি সৌন্দর্য - সাইফ ব্লগ

Latest

Sunday, August 15, 2021

দেখে আসুন রামগড়ের পাহাড়ি সৌন্দর্য

 প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরূপ লীলাভূমি পার্বত্য উপজেলা রামগড়। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলগুলো এমনিতেই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের আধার। তবে পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে সেই সৌন্দর্য্য যেন পূর্ণ মাত্রায় বিকশিত হয়েছে। পাহাড়, অরণ্য, ঝর্ণা, চা বাগান-সব মিলেমিশে সৃষ্টি করেছে এক অনির্বচনীয় সৌন্দর্য্য। বিভিন্ন ঋতুতে সেই সৌন্দর্য্য বিভিন্ন মাত্রা পায়। শীত ঋতুতে রামগড়ের শ্যামল সৌন্দর্য্য মোহিত করবে যে কাউকে। পাহাড়ি সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি পাহাড়ি মানুষদের বৈচিত্র্যময় জীবন, তাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি নাগরিক মানুষকে নিয়ে যাবে ভিন্ন এক জগতে, বেঁচে থাকার আনন্দকে করবে পরিপূর্ণ।


 



যা দেখবেন: সীমান্ত শহর রামগড়ে প্রবেশদ্বারেই রয়েছে সুবিশাল চা বাগান। ফেনী খাগড়াছড়ি সড়কটি এ চা বাগানের বুক চিরে চলে গেছে রামগড়ে। প্রতিদিনই এ সড়কে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রী মনভরে উপভোগ করেন চা বাগানের শান্ত সবুজাভ সৌন্দর্য্য। চা বাগানের কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে এক বিশাল প্রাকৃতিক লেক।

 


 এই শীতে এখানে এলে হাজার হাজার অতিথি পাখীর সুমধুর কলতান মুগ্ধ করবে আপনাকে। রামগড় শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত লেক পার্কটি এই অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণ। এখানে রয়েছে একটি চমত্কার ঝুলন্ত ব্রিজ। আর আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিভাস্কর্য 'বিজয়'। এ লেক পার্কের কাছেই ভারত সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির জন্ম স্মৃতিসৌধ। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন এ স্মৃতিসৌধে লেখা রয়েছে ১৭৯৫ সালে রামগড়ে এ সীমান্তরক্ষীবাহিনীর গোড়াপত্তনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। রয়েছে পোড়ামাটির টেরাকোটায় এ বাহিনীর বিভিন্ন বিবর্তনের অবয়ব। এর একটু দূরেই সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর কিনারায় অবস্থিত প্রাচীন এসডিও বাংলো। 

পৌর শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে রয়েছে কলসীমুখ নামে আরও একটি দর্শনীয় স্থান। কলসীর আকৃতিতে একেঁবেঁকে যাওয়া সীমান্তবর্তী ফেনী নদী, এর মাঝে দ্বীপভূমি সদৃশ একটি পাহাড়ি গ্রাম, যার তিনদিকজুড়েই ভারত- এমন চমত্কার রূপ দেখা যায় নদী থেকে হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্প থেকে। উপজেলা সদরের অদূরেই কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এবং এর একটু দূরে অবস্থিত হর্টিকালচার সেন্টারের (স্থানীয়ভাবে সয়েল বাগান বা পাইলট বাগান নামে পরিচিত) প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবে। রামগড় থেকে মাত্র দেড়, দুই ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে যাওয়া যায় খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট বলে পরিচিত 'আলুটিলা'য়। এটি যেন বাংলাদেশের দার্জিলিং। জেলার সর্বোচ্চ পাহাড় আলুটিলার বুক চিরে সর্পিল আকারে চলে গেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী মহাসড়কটি। রাস্তার দু'ধারে সবুজ বনাঞ্চলে ঢাকা সারি সারি উঁচুনিচু পাহাড়। পাহাড়ের গা ঘেঁষে ভাসমান মেঘের লুকোচুরি খেলা, কোথাও আবার পাহাড়ের ঢালে ফলফলাদি ও রাবার বাগান আর পাহাড়িদের জুম ফসলের ক্ষেত। আলুটিলা বটমূল তথা পর্যটন স্পটে রয়েছে প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করার সুব্যবস্থা। আছে বসার বেঞ্চ এবং একাধিক অবজারভেশন টাওয়ার। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে পুলিশ। কয়েকটি টি স্টল আছে। এখানে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিশাল আকৃতির একটি রহস্যময় সুরঙ্গ। দীর্ঘ্য ও প্রশস্ত আঁকাবাঁকা হিমশীতল এ সুরঙ্গ পাড়ি দিতে প্রয়োজন হয় সার্চ লাইট বা মশাল। এখানে কিনতে পাওয়া বাঁশের তৈরি মশাল। আলুটিলার আরেক আকর্ষণ 'রিছং ঝর্না।' এটিও প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট। আলুটিলার চূড়ায় অবস্থিত বৌদ্ধ মন্দিরটিও বেশ সুন্দর। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ এখানকার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবন ও তাদের বর্ণিল কৃষ্টি ও সংস্কৃতি মুগ্ধ করবে আপনাকে।



যেভাবে যেতে হবে: ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা ফেনী থেকে সহজেই যাত্রীবাহী কোচ বা বাসযোগে যাওয়া যায় রামগড় ও খাগড়াছড়িতে। ঢাকার কমলাপুর, ফকিরাপুল,সায়েদাবাদ প্রভৃতি স্থানে রয়েছে খাগড়াছড়ির বাস কাউন্টার। এসব স্থান থেকে সৌদিয়া, শ্যামলী, এস আলম, শান্তি পরিবহন প্রভৃতি চেয়ারকোচের নৈশ ও দিবা সার্ভিস রয়েছে। রাত ১১টা হতে ১২টা এবং সকাল ৭টা হতে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে এসব কোচ যাত্রা করে। ভাড়া জনপ্রতি ৪৫০ টাকা। খাগড়াছড়ি থেকেও এসব কোচের দিবা ও নৈশ সার্ভিস রয়েছে। এসব কোচে রামগড় আসা যায়। রামগড় ভ্রমণ শেষে এখান থেকে বাস ছাড়াও সিএনজি চালিত অটোরিক্সা কিংবা চাঁদেরগাড়ি রিজার্ভ করে আলুটিলায় যাওয়া যায়। ফেনীর মহিপাল এবং চট্টগ্রামের অক্সিজেন বাস টার্মিনাল থেকে রামগড় ও খাগড়াছড়ির বাস ছেড়ে আসে।

থাকার ব্যবস্থা: রামগড়ে একটি সরকারি রেস্ট হাউস রয়েছে। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি নিয়ে এখানে থাকা যায়। এছাড়া কয়েকটি হোটেল রয়েছে রামগড় বাজারে। আলুটিলার পাদদেশে চেঙ্গী নদীরকূলে রয়েছে পর্যটন কর্পোরেশনের অত্যাধুনিক মোটেল। এখানে এসি, নন এসি রুম আছে। এছাড়া আলুটিলায় অবস্থিত খাগড়াছড়ি জেলা সদরে রয়েছে হোটেল জিরান, লবিয়ত, শৈল সুবর্ণা, ফোর স্টার প্রভৃতি হোটেল


 

 রামগড় ভ্রমণের ভিডিও



No comments:

Post a Comment