ঘুরে আসুন চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল - সাইফ ব্লগ

Latest

Sunday, September 2, 2018

ঘুরে আসুন চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল

পাহাড়ের কোলে সবুজময় শতবর্ষী চা-বাগান, হাওড়ের বিস্তির্ণ জলরাশি, বৃষ্টিস্নাত ঘন বন; শ্রীমঙ্গলের বর্ণনা দেয়ার জন্য এই-ই যথেষ্ট। জলাভূমি, পাহাড় , ঘন বনাঞ্চলের এত অসাধারণ সমন্বয় দেশের আর কোথাও দেখা যায় না। সাজানো গোছানো চা-বাগানের অবস্থানের কারনে অনেকে শ্রীমঙ্গলকে দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ির দেশও বলে থাকেন। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলা হচ্ছে শ্রীমঙ্গল; জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। এই এলাকাটি দেশের সবচেয়ে বৃষ্টিপাত প্রবণ স্থান; একারনেই এই উপজেলায় গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত চা-বাগান, আরও আছে দেশের একমাত্র রেইন ফরেস্ট বা বর্ষাবন লাউয়াছড়া। প্রকৃতি যেন পরম যত্নে শ্রীমঙ্গলকে সাজিয়েছে; তাইতো প্রকৃতি ও ভ্রমণপিয়াসু মানুষদের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠেছে শ্রীমঙ্গল। উপভোগ করার মত অনেকগুলো স্থান রয়েছে শ্রীমঙ্গল ও তার আশেপাশের এলাকায়। 

 

দর্শনীয় স্থানসমূহ:

চা-বাগান: 

 

যত দূর চোখ যায় কেবল সবুজের হাতছানি। চা বাগানের সারি সারি টিলা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর ঘন সবুজ অরণ্যের অপরূপ সৌন্দর্য যে কাউকে আকৃষ্ট করে। তাই পর্যটকরা বার বার ছুটে যায় চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলের চিরসবুজের শোভা আর বৃষ্টিস্নাত পাহাড়ি সৌন্দর্য দেখতে। 

চায়ের জন্য বিখ্যাত শ্রীমঙ্গল উপজেলার অবস্থান সিলেটের মৌলভীবাজার জেলায়। পাতা আর কুঁড়ির এই দেশ পাহাড় আর চা বাগানে ঘেরা আর সব সময়ই ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক আদর্শ স্থান। সবুজে মোড়ানো শ্রীমঙ্গলে রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ চা বাগান। রয়েছে আনারস ও রাবার বাগান। চায়ের রাজধানী এই শ্রীমঙ্গলের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পশুপাখির বিচরণ নিমিষেই মুগ্ধ করে দেয় চোখ আর মনকে। শ্রীমঙ্গলের উত্তর-পশ্চিম পাশে কিছু অংশ হাইল হাওর ছাড়া পুরোটা উপজেলাই চা বাগান দ্বারা আবৃত। আপনি যখন মাইলের পর মাইল চা বাগানের ভেতর দিয়ে যাবেন, তখন আপনার মনে হবে বিশ্বের সকল সৌন্দর্যরাশি যেন আপনার সম্মুখে।

 

চা-যাদুঘর:

 বাংলাদেশে চায়ের বিভিন্ন জাত, চা-চাষ সম্পর্কিত নানা উপাদান ও চা চাষের দেড়শ বছর পার হওয়া ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য ২০০৯ সালে শ্রীমঙ্গলের টি-রিসোর্টে স্বল্প পরিসরে টি-বোর্ডের উদ্যেগে গড়ে তোলা হয়েছে একটি চা-যাদুঘর। এখানে আসলে দেখতে পাবেন ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানে ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, চা শ্রমিকদের ব্যবহৃত বিশেষ কয়েন, রাজনগর চা বাগানের নিজস্ব কয়েন, বাগান লাগোয়া ব্রিটিশ বাংলোয় ব্যবহৃত শতাধিক আসবাবপত্র, ব্রিটিশ আমলের ফিল্টার, চা গাছের মোড়া-টেবিল, প্রোনিং দা, প্লান্টিং হো, রিং কোদাল ইত্যাদি। তবে যাদুঘরটির সংগ্রহ সমৃদ্ধ করার কাজ এখনও চলছে।

 

বাংলাদেশ চা গবেষনা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই):

চায়ের রাজধানীতে গড়ে উঠেছে গবেষণা কেন্দ্র। বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রটি শ্রীমঙ্গলের মূল শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই স্থানটি বিটিআরআই হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। শহর থেকে ১০ থেকে ১৫ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে সহজেই বিটিআরআই পৌঁছে যেতে পারেন। বিটিআরআই ক্যাম্পাসেই রয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন অফিস। অফিস গেটে রিকশা থেকে নামা মাত্রই চোখে পড়বে হরেক রকম ফুলের সমাহার। বিটিআরআইয়ের অপরটি চা বোর্ডের অফিস। দুটোই পাশাপাশি। ভেতরে দেখতে পাবেন ৫০-৬০ বছরের পুরোনো চা গাছ। চা ম্যানুফ্যাকচারিংসহ টি টেস্টিং ল্যাব, গবেষণা ফ্যাক্টরিসহ বাংলাদেশের একমাত্র ভেষজ উদ্ভিদের বাগান। বিটিআরআইয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ মনোমুগ্ধকর।

গত বছর দেশে প্রথমবারের মতো বিটিআরআইয়ে চা জাদুঘর স্থাপন করা হয়। চা জাদুঘর স্থাপিত হওয়ায় শ্রীমঙ্গলের পর্যটনে সংযোজিত হয়েছে নতুন মাত্রা।

 

No comments:

Post a Comment