সাদা পাথরের স্বর্গরাজ্য সিলেটের ভোলাগঞ্জ , উৎমাছড়া, তুরংছড়া - সাইফ ব্লগ

Latest

Monday, September 9, 2019

সাদা পাথরের স্বর্গরাজ্য সিলেটের ভোলাগঞ্জ , উৎমাছড়া, তুরংছড়া



  সাইফুল ইসলাম ভূঁঞা⇒
সৌন্দর্যের প্রাচুর্যে ভরা সিলেট বিভাগ। সবখানে ছড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন সব পর্যটনকেন্দ্র। সবুজে মোড়া পাহাড়ের কোলঘেঁষা পাথুরে নদী, ঝরনা, বন, চা-বাগান, নীল জলরাশির হাওর; কী নেই এখানে! সিলেটের এমন প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য উপভোগ করতে দেশ-বিদেশের পর্যটক আর ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ভিড় জমান। সিলেটের অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম নয়নাভিরাম ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদের উৎসমুখে এর অবস্থান।




সিলেটের সীমান্তবর্তী একটি নদের নাম ধলাই। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে এসেছে এটি। ধলাই নদের উৎসমুখে পাঁচ একর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সাদা সাদা পাথর। ওপারে উঁচু পাহাড়ে ঘেরা সবুজের মায়াজাল। সেখান থেকে নেমে আসা ঝরনার অশান্ত শীতল পানির অস্থির বেগে বয়ে চলা। গন্তব্য তৃষ্ণার্ত ধলাইয়ের বুক। স্বচ্ছ নীল জল, সাদা পাথর আর পাহাড়ের সবুজ মিলেমিশে যেন একাকার। ধলাইয়ের বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাথরের বিছানা শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে হাজার গুণ।


 
ধলাই নদীর মনোলোভা রূপ, সবুজ পাহাড় বন্দী এলাকা জুড়ে অজস্র সাদা পাথর, আকাশের নীল ছায়া রেখে যায় পাথরে জমে থাকা স্ফটিক জলে। দূরের পাহাড়গুলোর উপর মেঘের ছড়াছড়ি, সাথে একটা দুটো ঝর্ণার গড়িয়ে পড়া। নদীর টলমলে হাঁটু পানির তলায় বালুর গালিচা। চিক চিক করা রূপালী বালু আর ছোট বড় সাদা অসংখ্য পাথর মিলে এ যেন এক পাথরের রাজ্য। প্রকৃতির খেয়ালে গড়া নিখুঁত ছবির মত সুন্দর এই জায়গাটির নাম ভোলাগঞ্জ। সাদা সাদা পাথর ছড়ানো এই জায়গাটি দেখতে অবিকল বিছানাকান্দির মতো। এ যেন সাদা পাথরের আরেক বিছানাকান্দি। জাফলং, বিছানাকান্দিতে তো অনেকেই গিয়েছেন, এবার ঘুরে আসুন অনিন্দ্য সুন্দর ভোলাগঞ্জ থেকে।



ভোলাগঞ্জের আর একটি আকর্ষণীয় স্থান হলো ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে। পাথর কোয়ারী, পাহাড়ি মনোলোভা দৃশ্য অবলোকনের পাশাপাশি ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে এলাকা ঘুরে দেখতে পারেন। ১৮৬৪ সালে সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে প্রকল্প। মজার ব্যাপার হলো, এলাকাটি দেখতে অনেকটা ব-দ্বীপের মতো। ধলাই নদী বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে প্ল্যান্টের চারপাশ ঘুরে আবার একীভূত হয়েছে। রোপওয়ের এরিয়া প্রায় একশ একর। আর এ কারণেই স্থানটি পর্যটকদের কাছে এত আকর্ষণীয়।


সাদা পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা ঝরনার পানির তীব্র স্রোত নয়ন জুড়ায়। শীতল জলের স্পর্শে প্রাণ জুড়িয়ে যায় নিমিষে। পাথরের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে বয়ে চলা পানির কলকল শব্দে যেন পাগল করা ছন্দ। বরফ গলার মতো ঠাণ্ডা সেই পানি। বেশিক্ষণ গা ভেজালে শরীরে শীতের কাঁপন লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়।
যেভাবে যাবেন
* সড়কপথ: সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভোলাগঞ্জ বাজার। ভাড়া জনপ্রতি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। চাইলে লেগুনা কিংবা অন্য অন্যান্য গাড়ি ভাড়া করেও যাওয়া যায়। ভোলাগঞ্জ বাজারের ফেরিঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করতে হবে। ভাড়া যাওয়া-আসা মিলিয়ে ৮০০ টাকা।


উৎমাছড়াঃ 


সিলেটের বিছানাকান্দি অনেক জনপ্রিয় একটি গন্তব্য। কেউ সিলেটে ঘুরতে গেলে এটা সাধারণত বাদ দেন না। আর যার ফল হল, এটা সবসময় মানুষ দিয়ে ভরপুর থাকে। প্রকৃতির নির্জনতা আর নিজস্বতা অনেকখানিই বিঘ্ন হয় এভাবে। এরকমই আর একটা জায়গা হল উৎমাছড়া। যেখানে এখনও মানুষের ভীড় অনেকটাই কম।

 উৎমাছড়াকে বলা হয় বিছানাকান্দির প্রতিরূপ। চারপাশে সারি সারি পাহাড়, পাহাড়ের বুকে গাঢ় সবুজের প্রলেপ, গাছপালা আর ঝোপঝাড় দিয়ে ভরা। পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে চলেছে শীতল স্বচ্ছ জলরাশি। স্রোতেরা বাধা পেয়ে পেয়ে সরে সরে যাচ্ছে পাথর ছড়ানো ভূমিতে। আকাশে নীলের ছায়া আর সাদা কালো মেঘের ঘনঘটা। বিছানাকান্দির মত হলেও এর সাথে বাড়তি পাওনা হল মানুষের কম ভিড়। যাত্রাপথটি একটু কষ্টসাধ্য বলে সবাই আগ্রহী হয় না যেতে। তাই আপনি একটু কষ্ট করে যেতে পারলে পেয়ে যাবেন তুলনামূলক ভাল অভিজ্ঞতা। যাবার জন্য সেরা সময় হল বর্ষাকাল, তবে অন্য সময় গেলেও ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখা যাবে প্রকৃতির।


যেভাবে যাবেন-
১) সড়কপথ: সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভোলাগঞ্জের দয়ারবাজার। ভাড়া জনপ্রতি ভাড়া পরবে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। দয়ারবাজার থেকে নৌকা ভাড়া করতে হবে। মানুষের সংখ্যার ভিত্তিতে ভাড়া আসা-যাওয়া ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর ঘুরে দয়ারবাজার গিয়েও যাওয়া যাবে। 

তুরংছড়াঃ ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর , উতমাছড়া ঘুরে তুরংছড়া যেতে পারবেন । স্পটগুলো পাশাপাশি তাই একদিনেই তিনটি স্পট ঘুরে আসা যাবে। 





প্রয়োজনীয় তথ্য
অক্টোবর পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকায় যাওয়ার মোক্ষম সময়। সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জ এর দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটারের মতো। এই পথে কোনো বাস চলাচল নেই, কোনো লেগুনা চলে না। যাতায়াতের একমাত্র বাহন সিএনজি চালিত অটো রিক্সা।


* নৌপথ: সিলেট শহর থেকে বাদাঘাট হয়ে উমাইরগাঁও। সেখান থেকে সরাসরি ভোলাগঞ্জের নৌকা ভাড়া করা যায়। ভাড়া ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা।


সচেতনতা ও সতর্কতা

* সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে তা নষ্টের কারণ হওয়া ঠিক নয়। পরিবেশ হুমকিতে পড়ে এমন কিছু অবশ্যই করা উচিত হবে না। পলিথিন বা প্লাস্টিকের বোতলসহ পরিবেশ বিপন্ন হয় তেমন কিছু মনের অজান্তেও ফেলে আসা ঠিক নয়। প্রকৃতিকে বেঁচে থাকতে দিতে হবে তার নিজের মতো করে। * পর্যটন স্থানটি ভারত সীমান্তবর্তী। তাই সীমান্তের কাছাকাছি না যাওয়াই ভালো। ঘুরে বেড়ানোর সময় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড সদস্যদের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আর ভুলেও গভীর পানিতে নামা যাবে না। তীব্র স্রোতের কবলে পড়লে সাঁতার জানা মানুষেরও বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

 লেখক - মোঃ সাইফুল ইসলাম ভূঁঞা
 

No comments:

Post a Comment